আমার বাংলা, 7 জুলাই : রথের দিন যখন মাহেশ, মহিষাদল কিংবা গুপ্তিপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় রথের দড়ি টানা হয় তখন ভিন্ন ছবি দেখা যায় পূর্ব বর্ধমানে। একসঙ্গে দুটি রথের দড়ি টানা হয় এখানে । শুনতে অবাক লাগলেও প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষ্মী নারায়ন জিউ মন্দিরে। রথযাত্রা উপলক্ষে আজও সেখানে সাতদিন ধরে মেলা বসে।
বর্ধমান রাজবাড়ির কুলদেবতা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে আছে দুটি রথ। একটা রাজার রথ আর একটা রানীর রথ। রানীর কাঠের রথটি থাকে মন্দিরের ভিতরে আর বাইরে থাকে রাজার পিতলের রথ। যদিও এখন রানীর রথ কাঠের হলেও আগে সেই রথ ছিল রূপোর তৈরি।
তবে দু’টি রথেই দেখতে পাওয়া যায় না জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রাকে । পরিবর্তে একটি রথে থাকেন লক্ষ্মী নারায়ণ শিলা ও অপর রথে থাকেন রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপাল । রাজার পিতলের রথটি বাইরে টানা হয় অন্যদিকে রানির কাঠের রথটি মন্দিরের ভিতরেই টানা হয় । তবে যেহেতু জগন্নাথ দেব নেই, তাই নেই কোনও মামার বাড়িও । ফলে সারাদিন এক জায়গাতেই রথকে রাখা হয় । সেই রথের দড়িতে টান দেওয়ার জন্য বাইরের মানুষজন ভিড় জমান । মন্দির প্রাঙ্গনে মেলাও বসে ।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যেহেতু দিনে দিনে রাজবাড়ির বিভিন্ন অংশ ভগ্নদশায় পরিণত হচ্ছে তাই রাজবাড়ির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের পক্ষ থেকেই হোক কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে ৷ যদি সেই মন্দির সংস্কার করা যায় তাহলে রাজবাড়ির ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে না ।
লক্ষ্মী নারায়ন জিউ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত উত্তম মিশ্র বলেন, ” বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদের আমল থেকে রাজবাড়িতে দুটি রথ টানা হচ্ছে। সেই সময় রানীর রথ ছিল রূপোর আর রাজার রথ ছিল পিতলের। যদিও এখন রূপোর পরিবর্তে রানীর কাঠের রথ টানা হয়। তবে রাজার পিতলের রথটি আজও আছে। এখানে রাজার রথে থাকেন রাধা দুলাল গোপাল ও রানীর রথে থাকেন লক্ষ্মী নারায়ন। রাজবাড়ির ঐতিহ্য মেনে আজও সকাল সাতটায় রথ টানা হয়। ‘
প্রতিবারই রথের দিন লক্ষ্মী নারায়ন জিউ মন্দিরে আসেন বংশীবদন রায়। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই তিনি তার বাবার হাত ধরে রাজবাড়িতে রথ দেখতে আসতেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে গল্প শুনেছেন আগে রাজবাড়িতে রূপোর একটা রথ টানা হত। তবে দিনে দিনে লক্ষ্মী নারায়ন জিউ মন্দির ভগ্নদশা শুরু হয়েছে। ফলে মন্দির সংস্কার করা না হলে অনেক কিছু ইতিহাস হারিয়ে যাবে। তাই রাজবাড়ীর ট্রাস্ট্রি বোর্ড কিংবা সরকার যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে হয়তো বাঁচানো যাবে।
স্থানীয় গৃহবধূ পম্পা বেজ বলেন, বিয়ের পর থেকেই তিনি এই মন্দিরে রথের দিনে রথের দড়ি টানতে আসেন। রাজবাড়ির কারুকার্য দেবে তিনি অবাক হয়ে যান। আর একসঙ্গে দুটি রথের দড়িতে টান দেওয়া তার কাছে বাড়তি পাওনা।