বিশেষ প্রতিবেদন, আমার বাংলা ওয়েব, নন্দীগ্রাম,৩১ মার্চ : রাজ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে হাইভোল্টেজ লড়াই হতে চলেছে নন্দীগ্রামে। যেখানে মূল লড়াই হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ববন্দ্যোপাধ্যায় ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে। রাজ্যের উন্নয়ন অনুয়ন্নয়ের চেয়ে কিংবা অব্য কোন বেশি কাজ করবে প্রার্থীদের পরিচয় এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৮ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ মুসলিম ভোটার, ৬৫ শতাংশ হিন্দু ভোটার। অর্থাৎ প্রায় ৫৪ হাজার মুসলিম ভোটার আছে। বাকি ১ লক্ষ ৫ হাজার হিন্দু ভোটার।
নন্দীগ্রাম ২ নং ব্লকে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯৯ হাজারের কিছুটা বেশি। এর মধ্যে সংখ্যা লঘু ভোটার আছেন ১২.১ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ মুসলিম ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় মোট মুসলিম ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। অন্যদিকে হিন্দু ভোটারের সংখ্যা ৮৭.৭ শতাংশ।
রাজনৈতিক মহলের মতে দুটি ব্লকে সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষের যাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বেশি। সেক্ষেত্রে প্রায় ৫৮ হাজারের বেশি সংখ্যালঘু মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। তবে হিন্দু ভোট কার পক্ষে যাবে তা নিয়ে দোলাচলে রয়েছে রাজনৈতিক মহল। তবে মোট হিন্দু ভোটারের ৩০ শতাংশ হিন্দু ভোট যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে যায় তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে থাকবেন নন্দীগ্রামে। কিন্তু যদি ৬৬ শতাংশ হিন্দু ভোট যদি শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষে যায় তাহলে শুভেন্দু অধিকারী অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের উপরে নির্ভর করেই ভোট বৈতরণি পার করার চেষ্টা করবেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই কারণে শুভেন্দু নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে বিশেষ প্রচারে জোর দেননি।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী ভোট পেয়েছিলেন ১৩৪৬২৩ টি। সিপিএম প্রার্থী আব্দুল কবির শেখ ভোট পেয়েছিলেন ৫৩৩৯৩ টি ও বিজেপি প্রার্থী বিজন কুমার দাস ১০৭১৩ টি ভোট পেয়েছিলেন। ৮১২৩০ ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জয়লাভ করেন।তবে মূল লড়াই হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী দিবেন্দ্যু অধিকারী পায় ১৩০৬৫৯ টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ শংকর নস্কর পায় ৬২২৬৮ টি ভোট। সেই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ৬৮৩৯১ ভোটে জয়লাভ করেন। তবে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট বাড়ে ৫১৫৫৫ টি ভোট। বিজেপি নেতাদের মতে, সেইসময় বিজেপির কোন সংগঠন না থাকলেও মানুষ তৃণমূলের বিপক্ষে ভোট দিতে শুরু করেছিল। বিজেপির ভোট ব্যাংক বেড়ে যাওয়ায় সেটা স্পষ্ট হয়েছে। আর সেই কারণেই তারা চলতি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীর জেতার ব্যাপারে আশাবাদী।
নন্দীগ্রামে একের পর এক ইশ্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।তবে রাজ্যের উন্নয়ন অনুন্নয়ের চেয়ে কিংবা অব্য কোন বেশি কাজ করবে প্রার্থীদের পরিচয় এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে নন্দীগ্রামের মতো হাইভোল্টেজ নির্বাচন এর আগে হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার চার দশকের রাজনৈতিক কেরিয়ার ও শুভেন্দু অধিকারী তার দুই দশকের রাজনৈতিক কেরিয়ার কার্যত বন্ধক রেখেছে। একজনের জয় অন্যজনকে অনেক দূরে পিছিয়ে দেবে। এমনকি একজনের জয়ে অন্যজনের রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।
তবে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় শান্তিপূর্ণ ভোট নেওয়াটাই বড়ো চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের কাছে।