আমার বাংলা ওয়েব, ২৫ মার্চ :
হোলির এক সপ্তাহ আগে মথুরা বৃন্দাবনে গেলেই লাঠমার হোলি উৎসবের সাক্ষী থাকতে পারবেন যে কেউ। হাজার হাজার পুরুষ মহিলা মেতে ওঠেন এই লাঠমার হোলি উৎসবে।মথুরার বারসানা গ্রামে এই লাঠমার হোলি বিখ্যাত। বৃন্দাবন মথুরাতে হোলি উৎসব একদিনের নয়। রাধা ও শ্রীকৃষ্ণের পূণ্যভূমি ব্রজভূমি।যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই ব্রজভূমি।শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান মথুরা শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে বারসানা গ্রাম। হোলি উৎসবের প্রায় সাত দিন আগে থেকেই এই গ্রাম হোলি উৎসবে মেতে ওঠেন। যাকে বলা হয় লাঠমার হোলি।
কিন্তু লাঠমার হোলি আসলে কী।
লাঠমার হোলিতে লাঠি দিয়ে খেলা হয়। এই হোলিতে অংশ নেওয়ার আগে স্থানীয় মন্দিরে প্রার্থনা করেন পুরুষ মহিলারা। প্রথমে পুরুষেরা মহিলাদের রঙ দিয়ে রাঙিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন মহিলারা লাঠি নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। তারা খেলাচ্ছলে পুরুষদের লাঠির বাড়ি মারে। পুরুষেরা নিজেদের বাঁচাতে ঢাল ব্যবহার করে। এরপর বদলা হিসেবে ফের পুরুষেরা মহিলাদের রঙ মাখানোর চেষ্টা করে। লাঠমার হোলি চলাকালীন কৃষ্ণ এলো বারসানায় গানের লাইন গাইতে থাকেন মহিলারা। এরপর মহিলারা হোলি খেলার জন্য বারসানা থেকে নন্দগাঁওতে চলে যান। কিন্তু মহিলারা কেন লাঠির বাড়ি মারে পুরুষদের।
কীভাবে শুরু হয়েছিল লাঠমার হোলির? কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণ তখন ছোট। একদিন মা যশোদার কাছে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ প্রশ্ন করেন, তিনি নিজে কেন শ্যামবর্ণ আর শ্রীরাধা কেন ফর্সা। যশোদা কোন উত্তর দিতে না পেরে শ্রীকৃষ্ণকে বলেন রাধাকে এমন ভাবে রঙ মাখিয়ে দিতে যাতে রাধার গায়ের রঙ না বোঝা যায়। সেই কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ তার সখাদের সঙ্গে নিয়ে রাধা ও তার গোপিনীদের রঙ মাখিয়ে দেয়। এরপর রাধা তাকে লাঠির বাড়ি দিয়েছিলেন। সেই ঐতিহ্যকে আজও ধরে রাখতে চলে আসছে লাঠমার হোলি।
এখানের দোলযাত্রা একদিনের অনুষ্ঠান নয়। সাতদিন ধরে চলে এই দোলযাত্রা। প্রতিবছর হোলির সাত দিন আগে থেকে বৃন্দাবনের হোলি উৎসব কিংবা মথুরার হোলি উৎসব চলে। এই হোলি উৎসবের বিভিন্ন রকমের নাম আছে। নন্দগাঁওতে এই হোলি লাঠমার হোলি নামে পরিচিত। বৃন্দাবনের বঙ্কুবিহারী মন্দিরে এই হোলি ফুলের হোলি, গোকূল হোলি, বৃন্দাবনে বসবাসকারী বিধবাদের হোলিও বিখ্যাত।
নন্দগাঁও ও বারসানা দুটি গ্রাম। একটা গ্রামে শ্রীকৃষ্ণ ও অন্য গ্রামে শ্রীরাধা বড়ো হয়েছিলেন। হোলির দিনে গ্রামের ছেলেরা সাধারণত গোপের পোশাক ও মহিলারা গোপিনীর পোষাক পড়েন। গোপীনীরা খেলার ছলে গোপদের উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করে। চলে আবির উড়িয়ে নাচ গান উৎসব। যা,চাক্ষুস করতে ভিন রাজ্য থেকে মানুষজন ভিড় করেন মথুরা বৃন্দাবনে।